11/22/2024 আর্মেনিয়ায় মুসলমানের হাজার বছরের ইতিহাস
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৫ জুলাই ২০২৩ ০৯:৪৩
পশ্চিম এশিয়ার স্থলবেষ্টিত দেশ আর্মেনিয়ার দাপ্তরিক নাম ‘দ্য রিপাবলিক অব আর্মেনিয়া’। ককেশাস অঞ্চলে অবস্থিত দেশটির সঙ্গে ইউরোপের গভীর ভূরাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এর পশ্চিমে তুরস্ক, উত্তরে জর্জিয়া, পূর্বে আজারবাইজান এবং দক্ষিণে ইরান অবস্থিত। ইয়েরেভান আর্মেনিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। দেশটির মোট আয়তন ২৯ হাজার ৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে দেশটির জনসংখ্যা ৩০ লাখ ৭৫৬ জন। আর্মেনিয়ার ৯৮ শতাংশ মানুষ আর্মেনীয় বংশোদ্ভূত।
আর্মেনিয়ার প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষ ক্যাথলিক খ্রিস্টান।
মুসলমানের সংখ্যা এক শতাংশের চেয়েও কম। দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা তিন হাজারের সামান্য বেশি বলে ধারণা করা হয়। আর্মেনিয়ায় ইসলামের বিজয় অভিযান শুরু হয় ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে। আলজেরিয়া ও আজারবাইজানের পারস্য অঞ্চল বিজয়ের পর মুসলিম বাহিনী আর্মেনিয়ার প্রতি মনোযোগী হয়। আর্মেনিয়া তখন বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অধীন ছিল।
আর্মেনিয়ায় প্রথম সামরিক সাফল্য পান সাহাবি ইয়াজ বিন গানম (রা.)। তিনি ১৭ হিজরি মোতাবেক ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে তারতুস ও রোমান ভূমি অতিক্রম করে বাদলিসে পৌঁছান। খিলাত শহর হয়ে আর্মেনিয়ার ‘আল আইন আল হামেসা’য় পৌঁছে যান। ইয়াজ বিন গানম (রা.)-এর বিজয়াভিযান ছিল অসস্পূর্ণ ও ক্ষণস্থায়ী।
তিনি ১৯ হিজরি উসমান বিন আবিল আস সাকাফিকে অভিযানে প্রেরণ করেন। এ যুদ্ধে সাফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল (রা.) শহীদ হন। অবশেষে আর্মেনিয়াবাসী ‘জিজিয়া’ বা নিরাপত্তা কর চুক্তিতে সম্মত। চুক্তিতে প্রতি পরিবারের পক্ষ থেকে এক দিনার কর নির্ধারণ করা হয়। তবে কিছুদিনের মধ্যে তারা চুক্তি ভঙ্গ করে।
২১ হিজরিতে সুরাকা ইবনে আমর (রা.)-এর নেতৃত্বে পুনরায় অভিযান শুরু হয়। আর্মেনিয়ানরা আবারও সমঝোতা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। তবে চূড়ান্ত বিজয়ের আগেই তিনি ইন্তেকাল করেন। আবদুর রহমান বিন রাবিআ বাহেলি (রা.) তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। অবশেষে ২৫ হিজরিতে হাবিব বিন মাসলামা ফিহরির নেতৃত্বে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। তবে উমাইয়া শাসনের শেষভাগ পর্যন্ত আর্মেনিয়ায় মুসলিম শাসন স্থিতিশীল পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
৬৫২ সালে আর্মেনীয়দের সঙ্গে ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক চুক্তি হয়। প্রিন্স থিওডরস দামেশক ভ্রমণ করেন এবং সেখানে তিনি মুসলিম শাসক কর্তৃক আর্মেনিয়া, জর্জিয়া ও আলবেনিয়ার শাসক নিযুক্ত হন। সপ্তম শতাব্দীর শেষে আব্বাসীয় আমলে একাধিক প্রতিনিধির মাধ্যমে আর্মেনিয়া শাসন করা হতো। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে আর্মেনিয়া আরব ও তুর্কি মুসলিম বসবাস করতে শুরু করে। খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীতে এই ধারা আরো প্রবল হয়। আর্মেনীয়রাও মুসলিম আমিরদের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে যোগদান শুরু করে। পরে আর্মেনিয়া উসমানীয় ও ইরানের সাফাবিদ সাম্রাজ্যের অধীন হয়। সাফাবীয়দের অধীনে থাকা পূর্ব আর্মেনিয়ার রাশিয়ার দখলে চলে যায় এবং পশ্চিম আর্মেনিয়া যেটি আর্মেনিয়ার মূল ভূখণ্ড মনে করা হয় তা তুর্কিদের অধীনে ছিল। ১৯১৮ সালে আর্মেনিয়া তুরস্ক থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু ১৯২০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর্মেনিয়া দখল করে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে আর্মেনিয়া স্বাধীন হয়।
দীর্ঘদিন মুসলমানদের শাসনাধীন থাকার পরও আর্মেনিয়ায় মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায়। এর প্রধান কারণ জাতিগতভাবে খ্রিস্টধর্মের প্রতি আর্মেনীয়দের ঝোঁক, ধর্মের প্রতি মুসলিম শাসকদের উদাসীনতা ও ইসলাম প্রচারে ব্যর্থতা। এ ছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তুর্কিদের সঙ্গে আর্মেনীয়দের সংঘাত ও ইসলামের প্রতি সোভিয়েত শাসকদের কঠোর মনোভাবের কারণে দেশটির বেশির ভাগ মুসলমান দেশত্যাগ করে বলে মনে করা হয়। সোভিয়েত আমলে আর্মেনিয়ার মসজিদসহ অন্য মুসলিম স্থাপনাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এগুলোর রূপান্তর ঘটানো হয়। রাজধানী ইয়েরেভানে অবস্থিত ব্লু মসজিদকে আর্মেনীয় মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় স্থাপনা মনে করা হয়। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৯৬ সালে তা পুনরায় খুলে দেওয়া হয়। এটি একটি শিয়া মসজিদ।
তথ্যসূত্র : দাওয়া ডট সেন্টার, উইকিপিডিয়া ও ইসলাম হিস্টরি ডটকম
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.