12/24/2025 আ. লীগের উপর নয়াদিল্লির নির্ভরতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:৩৭
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে ভোট পাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ‘ভারতবিরোধী মনোভাব’ ব্যবহার করার লোভ পরিহার করতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় দুদেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ভারতকে এই ‘আওয়ামী লীগ-নির্ভরতা’ থেকে সরে আসতে হবে।
ব্রাসেলসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে ‘সোনালি অধ্যায়ের পর: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সঠিক পথে ফেরানো’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাচনের পর নয়াদিল্লির উচিত হবে ঢাকার নতুন সরকারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। বিনিময়ে ঢাকার নতুন সরকারকেও ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের বিষয়গুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
নয়াদিল্লির বেশির ভাগ ক্ষোভ ব্যক্তি ড. ইউনূসের প্রতি। এ ছাড়া রয়েছে পশ্চিমাদের সঙ্গে ইউনূসের দীর্ঘ সময়ের সুসম্পর্ক এবং ভারতের প্রতি বিরুদ্ধাচরণ। ইউনূস-মোদি বৈঠকের জন্য বারবার ঢাকার অনুরোধ প্রত্যাখ্যানে দূরত্ব বেড়ে যায়। নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশিদের ভিসা স্থগিতও ক্ষোভ বাড়ায় জনমনে। আন্তঃসীমান্ত ট্রেন সংযোগ স্থগিত করায় দুই দেশের বাণিজ্য এবং জনগণের সম্পর্কে ভাটা পড়েছে।
ভারতীয় সাবেক এক কূটনীতিকের নাম প্রকাশ না করে প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া নিয়ে দ্বিধায় ছিল ভারত। নীতিনির্ধারক কেউ কেউ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা বললেও শক্তি দেখানোর পক্ষে ছিলেন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা ক্ষুণ্ন করারও চেষ্টা ছিল।
অন্যদিকে প্রথা ভেঙে ড. ইউনূসের চীন সফর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় দিল্লির। একই সঙ্গে ভারতীয় গণমাধ্যম ক্রমাগত অপতথ্য ছড়ানোয় দূরত্ব বাড়ে দুই দেশের।
২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার ক্ষমতা হারানো ভারতের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। কারণ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে ভারত ছিল তাঁর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্র। নয়াদিল্লির সমর্থন আওয়ামী লীগকে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন পার হতে সহায়তা করেছিল। কিন্তু ক্রমেই অজনপ্রিয় হতে থাকা একজন শাসকের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাবকে বাড়িয়ে তোলে। গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর প্রতিকূল অবস্থানে পড়ে ভারত। এর পর থেকে উভয় দেশই সম্পর্ক মেরামতে হিমশিম খাচ্ছে।
নয়াদিল্লি সম্ভবত ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না। তবে ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন এই সম্পর্ককে নতুন করে ঢেলে সাজানোর একটি সুযোগ দিচ্ছে। এই সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে নয়াদিল্লির উচিত নির্বাচনের পরে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া। অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নির্বাচনী প্রচারণার সময় ভারতবিরোধী বক্তব্য পরিহার করা।
সীমান্ত বিরোধ, নিরাপত্তা ঝুঁকি, ভারতের আধিপত্যবাদী আচরণ নিয়ে দুদেশের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব চলমান। তা ছাড়া সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার কারণে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রায়ই টানাপোড়েনের সৃষ্টি হচ্ছে।
গণঅভ্যুত্থানের পর নয়াদিল্লি ও ঢাকা একে অপরকে দোষারোপ করার বৃত্তে আটকে পড়েছে। উভয় পক্ষই দাবি করছে, তারা সম্পর্ক মেরামতের জন্য হাত বাড়িয়েছে, কিন্তু অন্য পক্ষ সাড়া দেয়নি। উল্টো একে অপরের বিরুদ্ধে ভারত সম্ভবত ড. ইউনূসের সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না। এর পরিবর্তে তারা বাংলাদেশের নির্বাচনের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছে। আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না দেওয়ায় বিএনপিকে এ নির্বাচনে এগিয়ে থাকা দল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবে ভারত ও বিএনপির মধ্যে টানাপোড়েনের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লির স্বার্থ রক্ষার জন্য এই দলটিই সম্ভবত এখন ভারতের জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প।
তবে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠন প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব উস্কে দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর একটি সাধারণ কৌশল। অন্যদিকে ভারতের বিজেপির আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি এবং অবৈধ অভিবাসন বিষয়ে অতিমাত্রায় সতর্কতা বাংলাদেশিদের অসন্তোষকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সংঘাতের আশঙ্কা ক্ষীণ হলেও সহিংস বিক্ষোভ, সাম্প্রদায়িক হামলা, সীমান্ত হত্যা এবং বিদ্রোহী তৎপরতা বাড়তে পারে।
ভারত মনে করে আসছে, বাংলাদেশের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রাখা আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার ওপর নির্ভরশীল, যা বাংলাদেশে রাজনীতি এবং দীর্ঘমেয়াদি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক– উভয় ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.