12/22/2025 আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে ভেনেজুয়েলার দ্বিতীয় তেল ট্যাংকার জব্দ
মুনা নিউজ ডেস্ক
২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:২৮
ভেনেজুয়েলার উপকূলের আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ (ডিএইচএস) জানিয়েছে, সম্প্রতি ভেনেজুয়েলা থেকে যাত্রা করা ওই জাহাজটি জব্দ করা হয়েছে। চলতি মাসে এটি ভেনেজুয়েলার উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের জব্দ করা দ্বিতীয় তেলবাহী ট্যাংকার।
এই পদক্ষেপটি এমন এক সময় এলো, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন—ভেনেজুয়েলায় আসা ও সেখান থেকে বের হওয়া নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকারগুলোর বিরুদ্ধে তিনি ‘ব্লকেড’ বা অবরোধের নির্দেশ দিয়েছেন।
ভেনেজুয়েলা সরকার এই সর্বশেষ জব্দের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে একে ‘চুরি ও অপহরণ’ হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ভেনেজুয়েলা বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ লুটের চেষ্টা করার অভিযোগ করে আসছে।
এক বিবৃতিতে ভেনেজুয়েলা সরকার জানিয়েছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড শাস্তিহীন থাকবে না। পাশাপাশি বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদসহ অন্যান্য বহুপাক্ষিক সংস্থা ও বিশ্বের বিভিন্ন সরকারের কাছে উত্থাপন করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
কোস্ট গার্ডের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে একটি বিশেষায়িত ট্যাকটিক্যাল টিম অংশ নেয়। জাহাজটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবস্থানের সময় সেটি জব্দ করা হয়। এর আগেও চলতি মাসে একই ধরনের অভিযানে একটি ট্যাংকার আটক করা হয়েছিল।
স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের সচিব ক্রিস্টি নোয়েম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ অভিযানের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, ২০ ডিসেম্বর ভোররাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড ও যুদ্ধ দপ্তরের সহায়তায় ভেনেজুয়েলায় সর্বশেষ নোঙর করা একটি তেলবাহী ট্যাংকার আটক করা হয়েছে।
প্রকাশিত সাত মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, ‘সেঞ্চুরিজ’ নামের একটি জাহাজের ডেকে হেলিকপ্টার অবতরণ করছে।
নোয়েম বলেন, নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলের অবৈধ পরিবহন, যা এই অঞ্চলে মাদক-সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগান দেয়, যুক্তরাষ্ট্র তা বন্ধ করতে থাকবে। আমরা আপনাদের খুঁজে বের করব এবং থামাব।
পানামার পতাকাবাহী এই ‘সেঞ্চুরিজ’ জাহাজটি গত পাঁচ বছরে গ্রিস ও লাইবেরিয়ার পতাকাতেও চলাচল করেছে বলে বিবিসি ভেরিফাইয়ের নথিতে জানা গেছে। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞাভুক্ত জাহাজের তালিকায় নেই।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ক্যারিবিয়ান সাগরে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে। এ সময় ভেনেজুয়েলার কথিত মাদক পাচারকারী নৌযানে চালানো হামলায় প্রায় ১০০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও এসব নৌযানে মাদক বহনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে কোনো প্রমাণ দেয়নি। ফলে কংগ্রেসে সামরিক বাহিনীর এই অভিযানের বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে ‘কার্টেল দে লস সোলেস’ নামের একটি ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ এনেছে, যা তিনি অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এই গোষ্ঠী ‘চুরি করা’ তেল বিক্রি করে মাদক সন্ত্রাস, মানব পাচার, হত্যা ও অপহরণের মতো অপরাধে অর্থ জোগান দেয়।
দ্বিতীয় জাহাজ জব্দের পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এক্স-এ লিখেছেন, অবৈধ অপরাধী নেটওয়ার্ক ধ্বংসে যুক্তরাষ্ট্র অবিচলভাবে সামুদ্রিক অভিযান চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, পশ্চিম গোলার্ধে সহিংসতা, মাদক ও বিশৃঙ্খলা চলতে দেওয়া হবে না।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণিত তেল মজুত থাকা ভেনেজুয়েলা সরকারের ব্যয় নির্বাহে তেল রফতানি আয়ের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের ‘ব্লকেড’ ঘোষণার এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে ‘স্কিপার’ নামের আরেকটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করে। হোয়াইট হাউসের দাবি, ওই জাহাজটি তথাকথিত ‘ঘোস্ট ফ্লিট’-এর অংশ ছিল এবং অবৈধভাবে তেল পরিবহনে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করত। জাহাজটি একটি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল।
সেই সময়ও ভেনেজুয়েলা সরকার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। প্রেসিডেন্ট মাদুরো অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র নাবিকদের ‘অপহরণ’ করেছে এবং জাহাজটি ‘চুরি’ করেছে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.