যুদ্ধ বন্ধ ও ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র যে প্রস্তাব দিয়েছিল, কিয়েভ ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের চাপের মুখে তা সংস্কার হতে যাচ্ছে। ইউরোপের নেতাদের অভিযোগ, ওয়াশিংটনের ওই প্রস্তাবে রাশিয়াকে বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সোমবার সুইজারল্যান্ডে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা এ প্রস্তাব নিয়ে অধিকতর আলোচনা করেন।
এর আগে রোববার জেনেভায় প্রথম দিনের আলোচনার পর ওয়াশিংটন ও কিয়েভ যৌথ বিবৃতিতে জানায়, তারা একটি ‘পরিমার্জিত শান্তি কাঠামো’ খসড়া তৈরি করেছেন। তবে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। গত সপ্তাহে কিয়েভ ও ইউরোপেয় দেশগুলোকে ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা দিয়ে অনেকটা অন্ধ করে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধের অবসানে একটি কাঠামোতে সম্মত হওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইউক্রেনকে সময় দেওয়া হয়। সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, রোববারের আলোচনার পর সংশোধিত পরিকল্পনায় ভবিষ্যতের রুশ হুমকির বিরুদ্ধে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও দেশটি পুনর্নির্মাণে অর্থায়নের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, আলোচনা অব্যাহত আছে।
সুইডেনে ইউক্রেনের মিত্রদের একটি পৃথক শীর্ষ সম্মেলন থেকে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা সবাই অংশীদারদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। এমন সমঝোতার সন্ধান করছি, যা আমাদের শক্তিশালী করবে; কিন্তু দুর্বল করবে না।’ তিনি বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে অবশ্যই অর্থ দিতে হবে; জব্দ রুশ সম্পদ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জেলেনস্কি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আছি। আমরা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় অংশীদার এবং আরও অনেকের সঙ্গে কাজ করছি, যাতে আমাদের বিরুদ্ধে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এবং প্রকৃত নিরাপত্তা আনতে পারে– এমন পদক্ষেপ নির্ধারণ করা যায়।’
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ইউক্রেনের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছেন। গত রোববারের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বদানকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সময়সীমা হয়তো নির্ধারণ নাও হতে পারে। যুদ্ধ শুরুর পর জেলেনস্কি এখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন। দুর্নীতি-কেলেঙ্কারির কারণে তাঁর দুই মন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাম্পের প্রস্তাবে ইউক্রেন দখলকৃত ভূমি রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এ প্রস্তাবে রাজি হলে খোদ জেলেনস্কির বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয়রা বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলতে পারেন।
শান্তি আলোচনার মধ্যে ইউক্রেনে হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। গতকাল সোমবার ইউক্রেনের খারকিভে ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালায় তারা। এতে অন্তত চারজন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়েছেন। খারকিভের মেয়র আইগর তেরেখভের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন এ খবর জানিয়েছে। তিনি জানান, হামলায় তিনটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এগুলোতে আগুন ধরে যায়। সামনে শীতকাল হওয়ায় যুদ্ধে জটিল পরিস্থিতির শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।